ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির:
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে শনিবার (১৩ মার্চ) ১৪ টি স্যাম্পল পজিটিভ হয় যাতে ২টি ফলোআপ স্যাম্পল ছিল, তারপর ও ১২টি স্যাম্পল পজিটিভ। বিগত কয়েক দিনের সারা দেশের চিত্র ও একই। আমাদের কি করতে হবে সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নিবে, তবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপ অনেক মারাত্মক, যেটা ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা দেখিয়ে দিয়েছে।
#গতকালের (শনিবার) একটা কঠিন বাস্তবতা হলো যারা বিদেশ যাওয়ার সার্টিফিকেট এর জন্য স্যাম্পল দিয়েছে তাদের ৩৩ স্যাম্পলে মধ্যে ৩ জন পজিটিভ। এ থেকে বুঝা যায় উপসর্গ বিহীন রোগী আমাদের কমিউনিটিতে আছে, যেটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
#কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার মধ্যে একটি হচ্ছে হুজুর বা ইমাম সাহেবদের করোনা হয় না। আমরা কিন্তু তুলারবাগ মসজিদের সেই ইমাম সাহেব কে কোনদিন ভুলবো না, ভুলবো না বাইতুশরফের শ্রদ্ধেয় পীর সাহেব কে, ভুলতে পারবো না সেই বিখ্যাত ইসলামি স্কলার নোমানী হুজুর সহ নাম জানা ও অজানা অসংখ্য হুজুর দের যাদেরকে আমরা এই করোনায় হারিয়েছি।
#অনেকের ধারণা মসজিদে কোন করোনা হয় না, তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন সৌদি আরবের দুটি চ্যানেল দেখে, যেখানে সরাসরি মক্কা ও মদিনার লাইফ টেলিকাস্ট করে সেখানে কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে নামাজ আদায় করেন। প্রতি বছর হজ্জে যাওয়ার সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমো এর দুটি টিকা দিয়ে তার কার্ড নিয়ে যেতে হয়, আমরা নিশ্চিত সেই দুটি র সাথে এখন থেকে কভিড-১৯ এর ভ্যাক্সিন কার্ড ছাড়া কেউ হজ্জ করতে পারবে না।
#প্রচলিত আরেক টি ধারণা হলো রোহিঙ্গাদের করোনা হয় না। কক্সবাজার জেলার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৫ হাজার টেস্ট করা হয়, আর রোহিঙ্গা ১১ লাখ এর মধ্যে কতজন টেস্ট করা হয়েছে বা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত পিক সিজনে তাদের কতটা স্যাম্পল টেস্ট করা হয়েছে, আমি সেই বিতর্কে যাব না, তবে এটাই বলতে পারি IEDCR যেটা এন্টিবডি গবেষণা করেছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৬০০০ লোকের মধ্যে, যাতে ৬০% এর বেশি এন্টিবডি পজিটিভ। তবে হ্যাঁ তাদের মধ্যে হয়তো মারাত্মক উপসর্গ কম ছিল। তার ও অনেক কারণ থাকতে পারে।
#গ্রামে করোনা হয় না, এরকম আমরা অনেকে মনে করে থাকি, কিন্তু ডায়বেটিস, কিংবা কিডনি রোগী বা শ্বাসকষ্ট রোগ আছে এইরকম ৪০ বছরের উর্ধ্বে ২০০ মানুষের বুকের এক্স রে করে দেখেন৷ তাদের বুকের ভাষা আপনার ধারণা পাল্টে দিবে। ব্রাকের সাথে সন্দেহজনক ৩ সপ্তাহের বেশী কাশি হয় এরকম রোগীদের যক্ষা স্ক্রিনিং কাজ করতে গিয়ে যে এক্স রে দেখা গেল তার অভিজ্ঞতা এই রকম। এক্স রে তে যক্ষার চেয়ে কভিড১৯ এর চিহ্নই বেশী। তবে হ্যাঁ গ্রামের বাড়ি গুলো অনেক দূরে দূরে এবং খোলা হাওয়ায় কারণে এক ধরনের স্বাস্থ্য বিধি হয়ে যায় নিজদের মধ্যে।
#ভ্যাক্সিন নিয়ে ও অনেকে মনে করেছেন করোনা জয় করা হয়েছে। অধিকাংশ গবেষণায় প্রমাণিত আমাদের প্রচলিত ভ্যাক্সিন দুই ডোজ দিলেও কার্যকারিতা ৬৬-৭৭%, অথচ মাক্সের গায়ে লিখা আছে N- ৯৫ মানে ৯৫%!! তাই যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে যে ভ্যাক্সিনের চেয়ে কার্যকরী ভাবে করোনা জয় করা যায় তা আমাদের পূর্ব দিকের দেশ সমূহ যেমন চীন, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড সহ অনেকে দেখিয়ে দিয়েছে। আবার একই দিকের দেশ হয়ে ও ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।
তবে এত কিছুর পরে ও আশার বানী হলো বিগত ১ বছরে ভাইরাসের ব্যাপারে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন হলো, একেবারে নতুন হয় গতবছরের মতো। আবদ্ধ স্থানে অতিরিক্ত লোক সমাগম, আবদ্ধ মার্কেটে ঈদের বাজার, আবদ্ধ হোটেল রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত পর্যটন, আবদ্ধ মসজিদ না রেখে দরজা জানালা খোলা রেখে , তাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা যায়। আগের স্বাস্থ্য বিধি অনেক কঠিন হলে ও CDC ববর্তমানে অনেক সহজ স্বাস্থ্য বিধি তৈরী করে।
এই পরিবর্তিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে হয়তো দ্বিতীয় দফা থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করবেন।
ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির
সহকারী অধ্যাপক,
ইনফেকসাস ডিজিজ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।